বাঘবিধবা ও মুন্ডাদের সেবায় গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ

0 Comments
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে নেতৃত্ব এবং বাঘবিধবা ও মুন্ডা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করায় সম্প্রতি গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আশিক

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত কয়রা উপজেলা। সেখানে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে স্বামী হারানো ‘বাঘবিধবাদের’ বসবাস। জীবনধারণ করতে প্রতিনিয়ত নানা সংগ্রাম করছেন এসব ‘বাঘবিধবারা’। এছাড়া কয়রাতে মাহাতো জনগোষ্ঠী অসহায় আদিবাসী মুন্ডাদেরও বসবাস। উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার এসব অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন আশিক। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি)’ নামে একটি সংগঠন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে নেতৃত্ব এবং বাঘবিধবা ও মুন্ডা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করায় সম্প্রতি গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন আশিক।

গত ১৯ নভেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বেলি হলে ‘গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০২১’ অনুষ্ঠানে আশিকের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন দেশটির উপ-রাষ্ট্রপতি নন্দ বাহাদুর পুঁন। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুবকদের ইতিবাচক কাজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অ্যাওয়ার্ডজয়ী আশিকের পুরো নাম মো. আশিকুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ী কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা নামক গ্রামে। আশিক আইসিডি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আশিকের ‘আইসিডি’ পাঁচ শতাধিক মুন্ডা পরিবার ও বাঘবিধবাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে, অস্বচ্ছল তিন বনজীবী নারীকে নৌকা ও সাত নারীকে সেলাই মেশিন প্রদান, ৩০ জন বনজীবী মুন্ডা নারীর মাঝে নৌকা বিতরণ, বাঘবিধবাদের মাঝে কম্বল বিতরণ ও ৩০ জন বাঘবিধবাকে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ও বিতরণ উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে ও ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৮ হাজার অসহায় পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান, সাতটি নলকূপ স্থাপন ও আম্পানে বিধ্বস্ত ১০টি পরিবারকে টেঁকসই ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে ‘আইডিসি’। এছাড়া মুন্ডা জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে গড়ে তুলেছে ‘বিরসা মুন্ডা প্রভাতি স্কুল’। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা-২০২০ ও আরটিভি-মনিমিক্স প্রেরণা পদক-২০২০।

মো. আশিকুজ্জামান বলেন, স্বীকৃতি ও সম্মাননা সবসময়ই অনুপ্রেরণার। তবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। এই সম্মাননার মাধ্যমে আমি আমার কাজকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশের তরুণ সমাজসেবীরা আমার কাজ সম্পর্কে জানতে পারছে, তারা উৎসাহ দিচ্ছে। আমি মনে করি, এ অর্জন শুধু আমার জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও অনেক গৌরবের।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়, বাঘবিধবা ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানোর জন্যই আইসিডি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমার স্বেচ্ছাসেবী কাজে অনেকে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

সোর্সঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Leave a Comment

Your email address will not be published.